
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে অগঠনতান্ত্রিকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। সোনারগাঁয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নামফলক ভেঙ্গে ফেলায় প্রতিবাদ করেছে জেলা পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর।
এই ইস্যু নিয়ে যখন আন্দোলন বিরাট আকার ধারণ করে তখন তা অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য জেলা আওয়ামীলীগের জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দেয় বলে আনোয়ার হোসেন দাবী জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক ভেঙ্গে ফেলার প্রতিবাদে ৩ দিনের কর্মবিরতির সমাপনী দিনে তিনি এ কথা বলেন। সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশনে জেলা পরিষদের নামফলক ভাঙার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে এক ঘন্টা করে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জাহাঙ্গীর আলমের অব্যাহতি প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাঙ্গার প্রতিবাদে মাঠে নামে নাই তারাই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। জাহাঙ্গীর আলমকে নামফলক ভাঙার প্রতিবাদ করেছিল বলে তাকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং অগঠনতান্ত্রিকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা দলের গঠনতন্ত্রে নেই। দল থেকে কাউকে অব্যাহতি দিতে হলে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তা আলোচনা করতে হবে। একই সাথে সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যা জেলা আওয়ামীলীগ করে নাই। তারা একক ভাবে সব সিদ্ধান নিতে পারে না। এই ঘটনার জন্য জাহাঙ্গীর ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। মানুষ ভুল করলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল। তাকেও ক্ষমা করা উচিৎ।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় নাই। সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। এমনকি নিজের দলের ভেতর যারা অন্যায় করেছে তাদেও পর্যন্ত ছার দেয় নাই। মানুষের স্বার্থে কথা বলেছি। জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি লড়াই করেছি। কারাগারে গিয়েছি, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছি। যাদেরকে আমি রাজনীতিতে শিক্ষা দিয়েছি তাদের দ্বারাই আমি নিগৃহীত হয়েছি। রাজনীতিতে খোকাসহ অনেকে আমাকে গুরু বলে সম্মান করে। আমিও তাদের স্নেহ করি। আর খোকাতো আমার অনেক ছোট। তাকে আমি ছোট ভাই হিসেবে আদর করি। সে কেন ঈর্ষানিত হয়ে এই ধরনের ন্যাক্কার জনক কাজ করেছে তা আমার বোধগম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে এবং মানুষকে ভালোবাসতে শিখতে। আমি এই কথায় বিশ্বাসী হয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেছি। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছি বলে স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী আমাকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, মো. আলাউদ্দিন, মাহবুবুর রহমান রোমান, ফারুক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়ালীউল্লাহ, উপসহকারী প্রকৌশলী কাঞ্চন কুমার পালিত, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেএম রাশেদুজ্জামান, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম, উচ্চমান সহকারী মীর মাহমুদা খানম, নমিতা মল্লিক, সার্ভেয়ার রকিবুল হাসান, অফিস সহকারী মিলন হোসেন, হারুন অর রশিদ, কম্পিউটার অপারেটর হারুন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে তার লোকজন এই নামফলক ভাঙে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গত ২১ নভেম্বর বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা বিরোধী দল উল্লেখ করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। পরে তিনি এজন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। কিন্তু ২৪ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়। তবে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলে মত দলের সিনিয়র নেতাদের।
No posts found.